' name='description'/> ' name='keywords'/> কারবালার ঘটনাকে আমরা কিভাবে মূল্যায়ন করব? ~ Islamic Entertainment.

Thursday, October 13, 2016

Filled Under:

কারবালার ঘটনাকে আমরা কিভাবে মূল্যায়ন করব?

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

কারবালার ঘটনাকে আমরা কিভাবে মূল্যায়ন করব?


এই প্রবন্ধটি Download করতে Click to  download



যে মুসলিম আল্লাহকে ভয় করে তার জন্য হুসাইনের নিহত হওয়ার ঘটনা স্মরণ করে বিলাপ করা, শরীর জখম করা, গাল, মাথা ও বুক থাবড়ানো বা এ রকম অন্য কিছু করা জায়েজ নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
ليس منا من لطم الخدود و شق الجيوب
"যে ব্যক্তি মুসীবতে পড়ে নিজ গালে চপেটাঘাত করল এবং শরীরের কাপড় ছিঁড়ল, সে আমাদের দলের নয়।" (বুখারী)
তিনি আরও বলেন: "মুসীবতে পড়ে বিলাপকারী, মাথা মুন্ডনকারী এবং কাপড় ও শরীর কর্তনকারীর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।"
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:
إن النائحة إذا لم تتب فإنها تلبس يوم القيامة درعاً من جرب و سربالاً من قطران
মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপকারী যদি তওবা না করে মারা যায়, তাকে কিয়ামতের দিন খাঁজলীযুক্ত (লোহার কাঁটাযুক্ত) কোর্তা পড়ানো হবে এবং আলকাতরার প্রলেপ লাগানো পায়জামা পড়ানো হবে। (মুসলিম)
তিনি আরও বলেন:
أربع في أمتي من أمر الجاهلية لا يتركونهن: الفخر في الأحساب و الطعن في الأنساب و الاستسقاء بالنجوم و النياحة
"আমার উম্মতের মধ্যে জাহেলী যুগের চারটি স্বভাব বিদ্যমান রয়েছে। তারা তা ছাড়তে পারবে না। (১) বংশ মর্যাদা নিয়ে গর্ব করা, (২) মানুষের বংশের নাম তুলে দুর্নাম করা, (৩) তারকারাজির মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা এবং (৪) মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা। তিনি আরও বলেন: মানুষের মাঝে দুটি জিনিষ রয়েছে, যা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। মানুষের বংশের বদনাম করা এবং মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা।" (মুসলিম)
তিনি আরও বলেন:
النياحة من أمر الجاهلية و إن النائحة إذا ماتت و لم تتب قطع الله لها ثيابا من قطران و درعاً من لهب النار
"মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা জাহেলিয়াতের অন্তর্ভুক্ত। বিলাপকারী যদি তওবা না করে মারা যায়, তাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ আলকাতরার প্রলেপ লাগানো জামা পড়াবেন এবং অগ্নি শিখা দ্বারা নির্মিত কোর্তা পরাবেন।" (ইবনে মাজাহ)
একজন বিবেকবান মুসলিমের উপর আবশ্যক হচ্ছে সে এ ধরণের মুসীবতের সময় আল্লাহর নির্দেশিত কথা বলবে।
আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন:
الذين إذا أصابتهم مصيبة قالوا إنا لله وإنا إليه راجعون
"যখন তাঁরা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।" (সূরা বাকারাঃ ১৫৬)
হুসাইনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আলী বিন হুসাইন, মুহাম্মাদ এবং জাফর জীবিত ছিলেন। তাদের কেউ হুসাইনের মৃত্যুতে মাতম করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তারা ছিলেন আমাদের হেদায়েতের ইমাম ও আদর্শ।
বিলাপ করা, গাল ও বুকে চপেটাঘাত করা বা এ জাতীয় অন্য কোন কাজ কখনই এবাদত হতে পারে না। আশুরার দিনে ক্রন্দনের ফজিলতে যে সমস্ত বর্ণনা উল্লেখ করা হয় তার কোনটিই বিশুদ্ধ নয়। বিলাপ করা জাহেলী জামানার আচরণ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন।


 মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করার ক্ষেত্রে শিয়া মাজহাবের মতামত: 


বিলাপ থেকে বিরত থাকার আদেশ শুধু সুন্নি মুসলিম বা বনী উমাইয়াদের জন্য নয় কিংবা এটি কেবল তাদেরই আচরণ নয় যে, শিয়ারা তা গ্রহণ করতে পারেন না; বরং আহলে বাইতের কথাও তাই। আহলে সুন্নত এবং শিয়া উভয় শ্রেণীর নিকটই মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা নিষিদ্ধ।
শিয়া আলেম ইবনে বাবুওয়াই আল-কুম্মী বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: বিলাপ করা জাহেলী জামানার কাজ। (দেখুন শিয়াদের কিতাব: من لايحضره الفقيه)
মাজলেসী থেকে অপর বর্ণনায় এসেছে, النياحة عمل الجاهلية অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির উপর উচ্চ স্বরে রোদন করা জাহেলিয়াতের কাজ। (দেখুন: বিহারুল আনওয়ার ১০/৮২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞার কারণেই আহলে সুন্নত ওয়াল জামআতের লোকেরা যে কোন মুসীবতের সময় মাতম ও বিলাপ করা থেকে বিরত থাকেন।


৯) আশুরার দিনে আমাদের করণীয় কীঃ 


সুন্নি মুসলিমগণ এই দিনে রোজা রাখেন। কারণ এটি এমন একটি দিন যাতে আল্লাহ তায়ালা মুসা ও তাঁর জাতির লোকদেরকে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউন সম্প্রদায়কে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছেন। আহলে সুন্নত ওয়াল জামআতের লোকেরা মনে করেন, খালেস দিলে রোজা অবস্থায় হুসাইনের জন্য দুয়া করা জাহেলী জামানার আচরণের মত মাতম ও বিলাপ করার চেয়ে অনেক উত্তম। এ দিনে রোজাদারের জন্য দুটি কল্যাণ রয়েছে। একটি হচ্ছে সম্মানিত দিনে রোজা রাখার ফযিলত আর অন্যটি হচ্ছে, রোজা অবস্থায় দুয়া করার ফজিলত। এই দুআর একটি অংশ বা সম্পূর্ণটাই তিনি ইচ্ছা করলে হুসাইনের জন্য করতে পারেন।
আশুরার দিনে রোজা রাখার ফজিলতে যা বর্ণিত হয়েছে:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِي اللَّه عَنْهمَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ وَجَدَهُمْ يَصُومُونَ يَوْمًا يَعْنِي عَاشُورَاءَ فَقَالُوا هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ وَهُوَ يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَأَغْرَقَ آلَ فِرْعَوْنَ فَصَامَ مُوسَى شُكْرًا لِلَّهِ فَقَالَ أَنَا أَوْلَى بِمُوسَى مِنْهُمْ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ
"আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখলেন ইহুদীরা আশুরার দিন রোজা রাখছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: এটি কোন রোজা। তারা উত্তর দিল যে, এটি একটি বিরাট পবিত্র দিন। এদিনে আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাইলকে তাদের শত্রদের কবল থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেন। তাই মুসা (আঃ) এ দিন রোজা রেখেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: তাদের চেয়ে মুসা (আঃ)এর সাথে আমার সম্পর্ক অধিক। সুতরাং তিনি রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকে রোজা রাখার আদেশ দিয়েছেন।" (বুখারী)
عَنْ عَائِشَةَ رَضِي اللَّه عَنْهَا قَالَتْ كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَصُومُهُ قُرَيْشٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُهُ فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ صَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا نَزَلَ رَمَضَانُ كَانَ رَمَضَانُ الْفَرِيضَةَ وَتُرِكَ عَاشُورَاءُ فَكَانَ مَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ لَمْ يَصُمْهُ (بخارى(
"আয়েশা (রা:) বলেন: আইয়ামে জাহেলিয়াতেও কুরাইশরা আশুরার রোজা রাখত। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামও এ দিনে রোজা রাখতেন। মদিনায় হিজরত করে এসেও তিনি এ দিন রোজা রেখেছেন এবং লোকদেরকে রোজা রাখার আদেশ দিয়েছেন। যখন রমাযানের রোজা রাখা ফরজ করা হল তখন আশুরার রোজা ছেড়ে দিলেন। সুতরাং তখন থেকে যার ইচ্ছা রোজা রাখত আর যার ইচ্ছা রোজা রাখা ছেড়ে দিত।" (বুখারী)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) হতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে,
حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আশুরার রোজা রাখলেন এবং রোজা রাখার আদেশ দিলেন, তখন সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! এটি তো এমন একটি দিন, যাতে ইয়াহুদ-নাসারারাও সম্মান করে। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আগামী বছর ইনশা-আল্লাহ্‌ নয় তারিখেও রোজা রাখবো। কিন্তু আগামী বছর আসার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। (বুখারী)


 শিয়াদের বর্ণনায় আশুরার রোজা: 



আলী বিন আবু তালেব (রা:) বলেন:
صوموا العاشوراء ، التاسع والعاشر ، فإنّه يكفّر الذنوب سنة
তোমরা আশুরার অর্থাৎ নয় এবং দশ তারিখে রোজা রাখো। কেননা ইহা পূর্বের এক বছরের গুনাহকে মোচন করে দেয়।
 (দেখুন: الاستبصار ২/১৩৪ (الحر العاملي في وسائل الشيعة ৭/৩৩৭)
জাফর (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহর কাফফারা স্বরূপ।
 আশুরার দিনে মাতম করার ভিত্তি কোথায়


বর্তমানে আশুরার দিনে হুসাইনীয়াত নামে যে অনুষ্ঠান, মাতম, বুক ও গাল থাবড়ানো, উচ্চ স্বরে ক্রন্দন এবং বিলাপ করে থাকে তার কোন ভিত্তি নেই। আহলে বাইতের মাজহাবেও তার কোন দলীল নেই এবং সর্বোপুরি ইসলামী আকীদার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। শিয়ারা যেহেতু বলে থাকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা হালাল করেছেন কিয়ামত পর্যন্ত তা ছাড়া অন্য কিছু হালাল নয় এবং তিনি যা হারাম করেছেন কিয়ামত পর্যন্ত তা ছাড়া অন্য কিছু হারাম নেই সেহেতু তাদের কাছে প্রশ্ন হল: আপনারা যদি উপরোক্ত কথাটি বিশ্বাস করেন তাহলে বাক্যটির বাস্তবায়ন কোথায়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নিষিদ্ধ জাহেলী জামানার একটি অভ্যাসকে আপনারা ইসলাম ও আহলে বাইতের নিদর্শন নির্ধারণ করেছেন কেন?
আশ্চর্যের কথা হচ্ছে তাদের মাশায়েখগণ আশুরার দিনে মাতম ও হায় হুসাইন হায় হুসাইন বলে চিৎকার করাকে আল্লাহর নিদর্শন বলে উল্লেখ করে নিম্নের আয়াতটিকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন:
ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ
এটা শ্রবণযোগ্য। কেউ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের অল্লাহ্ভীতি প্রসূত। (সূরা হজ্জ: ৩২) অতএব তারা বিলাপ করা, গাল ও বুক থাবড়ানো, আল্লাহর বান্দা ও রাসূলের সাহাবীদেরকে গালাগালি করাকে আল্লাহর সম্মানিত নিদর্শন মনে করেই করে থাকেন। এর চেয়ে অধিক মূর্খতা আর কি হতে পারে?
আরও আশ্চর্যের কথা হচ্ছে আশুরার রোজার ব্যাপারে সুস্পষ্ট হাদীছ থাকা সত্ত্বেও এগুলোকে তারা জেনেও না জানার ভান করে থাকেন। অপর পক্ষে তাদের আলেমগণ এই বর্ণনাগুলোকে বারবার আহলে সুন্নত ও বনী উমাইয়াদের বানানো বলে অপবাদ দিয়ে থাকেন। তারা আরও বলেন যে, বনী উমাইয়াগণ হুসাইনের মৃত্যু উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার জন্য এই রোজার প্রচলন করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্) অথচ সুন্নি ও শিয়া উভয় মাজহাবের হাদীছের কিতাবেই এই রোজার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর পবিত্র পরিবার এবং সাহাবীগণ আশুরার রোজা রেখেছেন। তিনি মুসলিমদেরকে রোজা রাখার আদেশ দিয়েছেন।
এখন তাদের কাছে প্রশ্ন হল: যে ব্যক্তি আশুরার দিনে রোজা রেখে, জিকির-আজকার করে, কুরআন তেলাওয়াত করে এবং অন্যান্য এবাদতের মাধ্যমে এই দিন অতিবাহিত করে সে হুসাইনের মৃত্যুতে আনন্দের অনুষ্ঠান করল? না যে ব্যক্তি মানুষের মাঝে গোশত, খাদ্য-পানীয় এবং অন্যান্য বস্তু বিতরণ করল এবং বিভিন্ন শির্কী কবিতা আবৃতি করে রাত পার করে দিল সে হুসাইনের মৃত্যু উদযাপন করল? মূলত: তাদের কথার মধ্যে সুস্পষ্ট স্ববিরোধীতা রয়েছে।


হুসাইনের হত্যায় ইয়াজিদ কতটুকু দায়ী



প্রথমেই বলে নিতে চাই যে আমার এই কথা ইয়াজিদের পক্ষে উকালতি করার জন্য নয়; বরং মূল সত্যকে বিশ্বের সকল বাংলাভাষী মুসলিমের সামনে তুলে ধরার জন্যে। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (র:) বলেন: সকল মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকের ঐকমতে ইয়াজিদ বিনম মুয়াবিয়া হুসাইনকে হত্যার আদেন দেন নি। বরং তিনি উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকে চিঠির মাধ্যমে আদেশ দিয়েছিলেন যে, তিনি যেন ইরাকের জমিনে হুসাইনকে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে বাঁধা দেন। এতটুকুই ছিল তার ভূমিকা। বিশুদ্ধ মতে তার কাছে যখন হুসাইন নিহত হওয়ার খবর পৌঁছল তখন তিনি আফসোস করেছেন। ইয়াজিদের বাড়িতে কান্নার ছাপ প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি হুসাইন পরিবারের কোন মহিলাকে বন্দী বা দাসীতে পরিণত করেন নি; বরং পরিবারের সকল সদস্যকে সম্মান করেছেন। সসম্মানে হুসাইন পরিবারের জীবিত সদস্যদেরকে মদিনায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন।
যে সমস্ত রেওয়াতে বলা হয়েছে যে, ইয়াজিদ আহলে বাইতের মহিলাদেরকে অপদস্থ করেছেন এবং তাদেরকে বন্দী করে দামেস্কে নিয়ে বেইজ্জতি করেছেন, তার কোন ভিত্তি নেই। বনী উমাইয়াগণ বনী হাশেমকে খুব সম্মান করতেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যখন ফাতেমা বিনতে আব্দুল্লাহ বিন জাফরকে বিয়ে করলেন তখন আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান এই বিয়ে মেনে নেন নি। তিনি হাজ্জাজকে বিয়ে বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দিয়েছেন।
শুধু তাই নয় হুসাইন হত্যার জন্য দায়ী উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের কাছে যখন হুসাইনের পরিবারের মহিলাদেরকে উপস্থিত করা হল তখন তিনি আলাদাভাবে তাদের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করলেন এবং তাদের ভরণ-পোষণ ও পরিধেয় বস্ত্রের ব্যবস্থা করলেন। (ইবনে জারীর হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)
ঐতিহাসিক ইজ্জত দাররুযা বলেন: হুসাইন হত্যার জন্য ইয়াজিদকে সরাসরি দায়ী করার কোন দলীল নেই। তিনি তাঁকে হত্যার আদেশ দেন নি। তিনি যেই আদেশ দিয়েছেন, তার সার সংক্ষেপ হচ্ছে, তাঁকে ঘেরা করা হোক এবং তিনি যতক্ষণ যুদ্ধ না করবেন ততক্ষণ যেন তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ না করা হয়।
ইমাম ইবনে কাছীর (র:) বলেন: এটি প্রায় নিশ্চিত যে ইয়াজিদ যদি হুসাইনকে জীবিত পেতেন, তাহলে তাঁকে হত্যা করতেন না। তাঁর পিতা মুআভীয়া (রা:) তাকে এ মর্মে অসীয়তও করেছিলেন। ইয়াজিদ এই কথাটি সুস্পষ্টভাবেই ঘোষণা করেছিলেন।


তাহলে কে হুসাইনকে হত্যা করল: 



এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কে হুসাইনকে হত্যা করল। সুন্নি মুসলিমগণ? আমীর মুআভীয়া? ইয়াজিদ বিন মুআভীয়া? না অন্য কেউ?
উত্তরটি মেনে নেওয়া অনেক মুসলিমের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হলেও তা প্রকাশ না করে পারছি না। প্রকৃত ও সঠিক তথ্য হল শিয়াদের একাধিক কিতাব বলছে যে, শিয়ারাই (ইরাক বাসীরাই) হুসাইনকে হত্যা করেছে। সায়্যেদ মুহসিন আল-আমীন বলেন: বিশ হাজার ইরাক বাসী হুসাইনের পক্ষে বয়াত নেয়। পরবর্তীতে তারা তাঁর সাথে খেয়ানত করেছে, তাঁর বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করেছে এবং তাঁকে হত্যা করেছে। (দেখুন: আয়ানুশ শিয়া ১/৩৪)


হুসাইনের হত্যাকারী নির্ধারণে ইবনে উমর (রা:)এর অভিমত: 


ইবনে আবী নু'ম হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন:
كُنْتُ شَاهِدًا لاِبْنِ عُمَرَ وَسَأَلَهُ رَجُلٌ عَنْ دَمِ الْبَعُوضِ فَقَالَ مِمَّنْ أَنْتَ فَقَالَ مِنْ أَهْلِ الْعِرَاقِ . قَالَ انْظُرُوا إِلَى هَذَا يَسْأَلُنِى عَنْ دَمِ الْبَعُوضِ وَقَدْ قَتَلُوا ابْنَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَسَمِعْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ هُمَا رَيْحَانَتَاىَ مِنَ الدُّنْيَا
আমি একদা আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন একজন লোক তাঁকে মশা হত্যা করার হুকুম জানতে চাইল। তিনি তখন লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কোন দেশের লোক? সে বলল: ইরাকের। ইবনে উমর (রা:) তখন উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললেন: তোমরা এই লোকটির প্রতি লক্ষ্য কর। সে আমাকে মশা হত্যা করার হুকুম জিজ্ঞেস করছে। অথচ তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাতিকে হত্যা করেছে। আর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, এরা দুজন (হাসান ও হুসাইন) আমার দুনিয়ার দুটি ফুল। (বুখারী, হাদীছ নং- ৫৯৯৪) অন্য বর্ণনায় মশার স্থলে মাছির কথা এসেছে।

 হুসাইনের ভাষণই প্রমাণ করে যে ইয়াজিদ তাঁর হত্যার জন্য 
 সরাসরি দায়ী নয়:


হুসাইন (রা:) নিহত হওয়ার পূর্বে ইরাক বাসীদেরকে ডেকে বলেছেন: তোমরা কি পত্রের মাধ্যমে আমাকে এখানে আসতে আহবান করো নি? আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করো নি? অকল্যাণ হোক তোমাদের! যেই অস্ত্র দিয়ে আমরা ও তোমরা মিলে ইসলামের শত্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি এখন সেই অস্ত্র তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে চালাতে যাচ্ছে। মাছি যেমন উড়ে যায় তেমনি তোমরা আমার পক্ষে কৃত বয়াত থেকে সড়ে যাচ্ছ, পোঁকা-মাকড়ের ন্যায় তোমরা উড়ে যাচ্ছ এবং সকল ওয়াদা-অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছ। ধ্বংস হোক এই উম্মতের তাগুতের দলেরা! (দেখুন আল-ইহতেজাজ লিত্ তাবরুসী)
ইমাম হুসাইনের এই ভাষণের কোন স্থানেই তিনি ইয়াজিদকে দায়ী করেন নি। ঘুরেফিরে ভাষণটি এই কথার প্রমাণ করে যে, তাঁর করুন পরিস্থিতির জন্য ইরাক বাসীগণই।
অতঃপর হুর বিন ইয়াজিদ নামক হুসাইনের একজন সমর্থক কারবালার প্রান্তরে দাড়িয়ে ইরাক বাসী সৈনিকদেরকে ডাক দিয়ে বললেন: তোমরা কি এই নেককার বান্দাকে এখানে আসতে আহবান করো নি? তিনি যখন তোমাদের কাছে এসেছেন তখন তোমরা তাঁকে পরিত্যাগ করেছ এবং তাঁকে হত্যা করার জন্য তাঁর শত্রুতে পরিণত হয়েছ। আর তিনি এখন তোমাদের হাতে বন্দী হয়েছেন। আল¬াহ যেন কিয়ামতের দিন তোমাদের পিপাসা না মেটান এবং তার উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করেন! (দেখুন: الإرشاد للمفيد ২৩৪ ، إعلام الورى بأعلام الهدى)
এই পর্যায়ে হুসাইন তাঁর পূর্বের সমর্থকদের বিরুদ্ধে একটি বদদুআ করলেন। তিনি বলেন:
اللهم إن متعتهم إلى حين ففرقهم فرقاً أي شيعاً وأحزاباً واجعلهم طرائق قددا و لا ترض الولاة عنهم أبدا ، فإنهم دعونا لينصرونا ، ثم عدوا علينا فقتلونا (انظر الإرشاد للمفيد ২৪১، إعلام الورى للطبرسي ৯৪৯، كشف الغمة ১৮:و৩৮
"হে আল্লাহ! আপনি যদি তাদের হায়াত দীর্ঘ করেন, তাহলে তাদের দলের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করে দিন। তাদেরকে দলে দলে বিচ্ছিন্ন করে দিন। তাদের শাসকদেরকে তাদের উপর কখনই সন্তুষ্ট করবেন না। তারা আমাদেরকে সাহায্য করবে বলে ডেকে এনেছে। অতঃপর আমাদেরকে হত্যা করার জন্য উদ্যত হয়েছে।
হুসাইনের এই দুয়া প্রমাণ করে যে, ইয়াজিদ প্রত্যক্ষভাবে হুসাইনের হত্যায় জড়িত ছিল না। কেননা তিনি দুয়ায় বলেছেন: হে আল্লাহ! আপনি তাদের শাসকদেরকে তাদের উপর কখনই সন্তুষ্ট করবেন না। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ইরাক বাসীগণ (শিয়াগণ) উমাইয়া শাসকদের সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় হুসাইনের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে এবং তাঁর সাথে খেয়ানত করেছে। বাস্তবে তাই হয়েছে। পরবর্তীতে উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদকেও নির্মম ও নিকিৃষ্টভাবে হত্যা করা হয়েছে।


আলী বিন হুসাইন তাঁর পিতা হুসাইনকে হত্যার জন্য কুফা বাসীদেরকে দায়ী করেছেন


শিয়া ঐতিহাসিক ইয়াকুবী বলেন: আলী বিন হুসাইন যখন কুফায় প্রবেশ করলেন তখন দেখলেন কুফার মহিলারা হুসাইন হত্যার বেদনায় ক্রন্দন এবং বিলাপ করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এরা কি আমাদের হত্যায় বিলাপ করছে? তাহলে আমাদেরকে হত্যা করল কে? অর্থাৎ তারা ব্যতীত আমাদের পরিবারের লোক ও আত্মীয়দেরকে অন্য কেউ হত্যা করে নি (দেখুন: তারিখে ইয়াকুবে ১/২৩৫)
উপরে বর্ণিত পৃষ্ঠা নাম্বারসহ তাদের কিতাবগুলোর তথ্য প্রমাণ করে যে, যারা নিজেদরোকে হুসাইনের সমর্থক ও প্রেমিক বলে দাবী করেন, তারাই তাঁকে হত্যা করেছেন। অতঃপর এই মারাত্মক অপরাধের জ্বালা অন্তর থেকে দূর করার জন্য তারাই পরবর্তীতে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন এবং যাদের কান্না আসে নি, তারাও অযথা কান্নার ভান করেছেন। এই খেলা-তামাশা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এবং এখনও চলছে। তাদের অনুসারীরা এখনও হুসাইনের জানাজা বহন করছেন।
হুসাইনের মৃত্যুতে রোদন করা যদি আহলে বাইতের প্রতি তাদের প্রকৃত ভালবাসার প্রমাণ হয়, তাহলে হুসাইনের প্রতি তাদের ভালবাসা সত্য হলে তারা হামজাহ (রা:)এর মৃত্যুতে রোদন করে না কেন?
হুসাইনের উপর তাদের এই কান্না যদি আহলে বাইতের প্রতি অগাধ ভালবাসার কারণেই হত, তাহলে শহীদদের সরদার রাসূলের চাচা হামজা (রা:)এর মৃত্যুতে তারা ক্রন্দন করে না কেন? তাঁকে যে নির্মমভাবে ও পাশবিকতার হত্যা করা হয়েছে, হুসাইন হত্যার পাশবিকতার চেয়ে তা কোন অংশে কম নয়। সায়্যেদ হামজাকে হত্যা করে তাঁর পেট ফেরে কলিজা বের করা হয়েছে। তারা কেন এই হত্যাকাণ্ডের জন্য বাৎসরিক মাতম করে না? তাদের বুক ও চেহারায় আঘাত করে না কেন? কাপড় টেনে ছিঁড়ে না কেন? প্রতি বছর যখন উহুদ যুদ্ধের দিন ও তারিখ আসে তখন তলোয়ার খেলায় মেতে উঠে না কেন? সায়্যেদ হামজাহ কি আহলে বাইতের একজন সম্মানিত সদস্য নন? এখানেই শেষ নয়; রাসূলের মৃত্যুর চেয়ে অধিক বড় কোন মুসীবত আছে কি? তাঁর মৃত্যুতে তাদের ক্রন্দন ও মাতম কোথায়? সচেতন পাঠকদেরকেই এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করে নিতে হবে এবং কারও আকীদায় ত্রুটি থাকলে লেখাটি পড়েই তা সংশোধন করে নিতে হবে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাদের কাছে হুসাইনই সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কি কারণে তাদের কাছে এত প্রিয়? উত্তর পূর্বে উল্লেখ করেছি। সেটিই আসল কারণ? না ইমাম হুসাইন কর্তৃক একজন পারস্য মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন, তাই এত ভালবাসা? উভয়টিই এর কারণ হতে মানা কোথায়? হুসাইন ও তাঁর পিতা আলী বিন আবু তালিব সম্পর্কে তাদের অন্যান্য আকীদাহ-বিশ্বাসের দিকে না গিয়ে এখানেই ছেড়ে দিলাম।


 হুসাইন রা. এর মাথা কোথায় গিয়েছিল



দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে হুসাইনের মাথা প্রেরণের বর্ণনা সহীহ সূত্রে প্রমাণিত হয় নি। বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, তিনি কারবালার প্রান্তরে শহীদ হয়েছেন। তাঁর সম্মানিত মাথা কুফার গভর্নর উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। আনাস বিন মালিক (রা:) বলেন: হুসাইনের মাথা উবাইদুল্লাহএর কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি তাঁর মাথাকে একটি থালার মধ্যে রেখে একটি কাঠি হাতে নিয়ে তা নাকের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করিয়ে নাড়াচাড়া করছিলেন এবং তাঁর সৌন্দর্য দেখে সম্ভবত বেখেয়ালে কিছুটা বর্ণনাও করে ফেলেছিলেন। হাদীছের শেষের দিকে আনাস (রা:) বলেন: হুসাইন (রা:) ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সবচেয়ে বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ। (বুখারী)
অন্য বর্ণনায় আছে, আনাস (রা:) বলেন: আমি উবাইদুল্লাহকে বললাম, তোমার হাতের কাঠি হুসাইনের মাথা থেকে উঠিয়ে ফেল। কারণ আমি তোমার কাঠি রাখার স্থানে রাসূলের পবিত্র মুখ দিয়ে চুমু খেতে দেখেছি। এতে কাঠি সংকোচিত হয়ে গেল। (দেখুন: ফতহুল বারী ৭/৯৬)
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, এরপর কোথায় হুসাইনের কবর হয়েছে এবং তাঁর মাথা কোথায় গিয়েছে, তা সঠিক সূত্রের মাধ্যমে জানা যায় নি। প্রকৃত ও সঠিক জ্ঞান আল্লাহর নিকটেই।

১৮) যেমন কর্ম তেমন ফল:


পরবর্তীতে আল-আশতার নাখয়ীর হাতে উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ নির্মমভাবে নিহত হন। যখন নিহত হলেন তখন তার মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মসজিদে রাখা হল। তখন দেখা গেল একটি সাপ এসে মাথার চারপাশে ঘুরছে। পরিশেষে উবাইদুল্লাহ বিন জিয়াদের নাকের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে মুখ দিয়ে বের হল। ফের মুখ দিয়ে প্রবেশ করে নাকের ছিদ্র দিয়ে তিনবার বের হতে দেখা গেল। (দেখুন: তিরমিযী, ইয়াকুব বিন সুফীয়ান)


ইয়াজিদ সম্পর্কে একজন মুসলিমের ধারণা কেমন হওয়া উচিত: 


তাফসীর, হাদীছ, আকীদা, এবং ইতিহাস ও জীবনীর কিতাবগুলো অধ্যয়ন করে যতদূর জানতে পেরেছি, তাতে দেখা যায় সালফে সালেহীনের নিকট গ্রহণযোগ্য এবং অনুকরণীয় কোন ইমামের কিতাবে ইয়াজিদের উপর লানত করা বৈধ হওয়ার কথা আজ পর্যন্ত খুঁজে পাই নি। কেউ তার নামের শেষে রাহিমাহুল্লাহ বা লাআনা হুল্লাহ- এ দুটি বাক্যের কোনটিই উল্লেখ করেন নি। সুতরাং তিনি যেহেতু তার আমল নিয়ে চলে গেছেন, তাই তার ব্যাপারে আমাদের জবান দরাজ করা ঠিক নয়। তাকে গালাগালি করাতে আমাদের ক্ষতি ছাড়া আর কিছু অর্জিত হবে না। তার আমল নিয়ে তিনি চলে গেছেন। আমাদের আমলের হিসাব আমাদেরকেই দিতে হবে। তার ভাল মন্দ আমলের হিসাব তিনিই দিবেন।
ইমাম যাহাবী ইয়াজিদের ব্যাপারে বলেন:
لانسبه ولانحبه
অর্থাৎ "আমরা তাকে গালি দিবো না এবং ভালও বাসবো না।" মদ পান করা, বানর নিয়ে খেলা করা, ফাহেশা কাজ করা এবং আরও যে সমস্ত পাপ কাজের অপবাদ ইয়াজিদের প্রতি দেয়া হয়, তা সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়। তবে তাঁর চেয়ে হুসাইন যে বহু গুণে শ্রেষ্ঠ ছিলেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সুতরাং তিনি মুসলিম ছিলেন। তার জীবনের শেষ মুহূর্তে আমরা যেহেতু উপস্থিত ছিলাম না, তাই তার ব্যাপারটি আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়াই অধিক নিরাপদ। তা ছাড়া বুখারী শরীফের একটি হাদীছে তার ক্ষমা পাওয়ার প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সেখানে আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমার উম্মতের একটি দল কুস্তুনতীনিয়ায় যুদ্ধ করবে। তাদেরকে ক্ষমা করা দেয়া হবে। জানা যাচ্ছে, ইয়াজিদ বিন মুআভীয়া ছিলেন সেই যুদ্ধের সেনাপতি। আর হুসাইন তাতে সাধারণ সৈনিক হিসেবে শরীক ছিলেন। সুতরাং ইয়াজিদও ক্ষমায় শামিল হতে পারে। আল্লাহই ভাল জানেন।


 উপসংহার:


হুসাইনরে মৃত্যু নিয়ে লোকেরা তিনভাগে বিভক্ত। একদলের মতে তিনি অন্যায়ভাবে মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য ইয়াজিদের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। তাই তাঁকে হত্যা করা সঠিক ছিল। তারা বুখারী শরীফের এই হাদীছ দিয়ে দলীল দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
من جاءكم وأمركم على رجل واحد يريد أن يفرق جماعتكم فاقتلوه
"একজন শাসকের সাথে তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকা অবস্থায় যদি তোমাদের জামআতে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য কেউ আগমন করলে তাকে হত্যা করো।" (বুখারী)
তারা বলেন: মুসলিমরা ইয়াজিদের শাসনের উপর ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। হুসাইন এসে সেই ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছেন। সুতরাং তাঁকে হত্যা করা যুক্তিসংগত হয়েছে।
অন্যদল মনে করেন হুসাইনই ছিলেন খেলাফতের একমাত্র হকদার। তাঁর আনুগত্য করা ব্যতীত অন্য কারও অনুসরণ করা বৈধ ছিল না। জামআত, জুমআসহ ইসলামের কোন কাজই তাঁর পিছনে বা তাঁর নিয়োগ কৃত প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কারও অনুসরণ করে সম্পাদন করলে তা বাতিল হবে। এমন কি তাঁর অনুমতি ব্যতীত শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করাও বৈধ ছিল না। এমনি আরও অনেক কথা। এই দলের কথার সমর্থনে কোন সুস্পষ্ট দলীল খুঁজে পাওয়া যায় নি।
আর উপরোক্ত উভয় দলের মাঝখানে হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামআতের মাজহাব। তাঁরা উপরের দুটি মতের কোনটিকেই সমর্থন করেন না। বরং তাঁরা বলেন: হুসাইন মজলুম ও শহীদ অবস্থায় নিহত হয়েছেন। তিনি মুসলিম জাতির নির্বাচিত আমীর বা খলীফা ছিলেন না। সুতরাং দ্বিতীয় মতের পোষণকারীদের কথা ঠিক নয়।
আর যারা বুখারী শরীফের হাদিছকে দলীল হিসেবে পেশ করে হুসাইনকে হত্যা করা বৈধ হওয়ার কথা বলে থাকেন তাদের দলীল গ্রহণ সঠিক নয়। হাদীছ কোনভাবেই তাদের কথাকে সমর্থন করে না। কারণ তিনি যখন তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকীলের চিঠি পেলেন তখন খেলাফতের দাবী ছেড়ে দিয়ে ইয়াজিদের সৈনিকদের কাছে তিনটি প্রস্তাব পেশ করেছেন।
সিরিয়ায় গিয়ে তাঁকে ইয়াজিদের সাথে সাক্ষাত করতে দেয়া হোক।
অথবা তাকে মুসলিম রাজ্যের কোন সীমান্তের দিকে যেতে দেয়া হোক।
অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক।
কিন্তু তারা কোন প্রস্তাবই মেনে নেয় নি। বরং তারা তাঁকে আত্ম সমর্পণ করে তাদের হাতে বন্দী হওয়ার প্রস্তাব করল। অস্ত্র ফেলে দিয়ে তাদের পাল্টা প্রস্তাব মেনে নেওয়া হোসাইনের উপর মোটেই ওয়াজিব ছিল না। সুতরাং তিনি বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করাকেই বেছে নিলেন এবং ইয়াজিদের বিরাট বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শন করে শাহাদাত বরণ করলেন।
পরিশেষে বলতে চাই যে, হুসাইনের মৃত্যু ও কারবালার ঘটনা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা কোন মুসলিমের কাজ হতে পারে না। এই হত্যা কাণ্ডের ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে অন্যান্য মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড থেকে আলাদা কোন ঘটনা নয়। এ জাতিয় সকল ঘটনাকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। বিষাদসিন্ধু মুসলিমদের কোন মূলনীতির গ্রন্থ নয়। এটি একটি কাল্পনিক উপন্যাস মাত্র। তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মুসলিম জাতি ঐতিহাসিকভাবে একটি প্রমাণিত সত্যকে বাদ দিয়ে কাল্পনিক কাহিনীকে কখনই সত্য হিসাবে গ্রহণ করতে পারে না।
هذا وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين
রচনায়: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী
জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদী আরব।
 
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

0 comments:

Post a Comment

Copyright @ 2013 Islamic Entertainment..